মনিনী
- Nil Roy - মনিনী ২৮-০৪-২০২৪

১.মনিনীর রূপ সন্ধ্যার আকাশের গোধূলি লাল ছুঁয়েছে তার চিবুক প্রকৃতিও আজ বড়ো ভাবুক সব বৃক্ষের শাখা কলম যেন পাতায় পাতায় লিখিত হবে আজ মনিনীর রূপ। ২.কিছু কী বলার নেই মনিনী কিছু কী বলার নেই মনিনী? শরতের ভেলায় চড়ে এই যে হেমন্ত এলো কাশফুল, এই যে ভোরের শিশির, কিছুই কী তোমার চোখে পড়ে না? শরতের বুকে এতো কথামালা হেমন্ত এলো রাজ্যের কথা নিয়ে কীসের অপেক্ষায় তুমি এতো আনমনা? ৩.এক নব্য জোনাকী তুমি মনিনী কিছু অসময় কেটেছে ভিন্ন বাতাসে কিছু সময় তুলে রেখেছিলে একান্তই নিজের করে তারপর খোলা জানালায় হেলান দিয়ে যখন পৃথিবীটা দেখলে-অসীম আকাশ যখন তোমায় বিশালতার আহ্বানে হাত নাড়ালো, নিজস্ব কলি থেকে গোলাপী পাপড়ি সমেত বেরিয়ে এলে এক মানবী পুষ্প। খোলস খুলে মুক্ত হওয়া এক নব্য জোনাকী তুমি মনিনী, পাথর ঠেলে ফ্যাঁকাসে ঘাসগুলোর মতো নতুন উদ্যামে। তোমার চোখে-মুখে খেলে আজ লাবণ্য, স্তনের চূড়ায় চড়ুঁইয়ের চঞ্চলতা সিগ্নতার মায়া জালে প্রকৃতী আজ সেজেছে তোমার প্রেমিক। ভেজা চুল থেকে ঝরা ফোঁটা ফোঁটা জল তোমার সতেজ করেছে বিরান ভূমি। ৪.মনিনী! কেমন ছিলে এতোটা দিন কেমন ছিলে এতোটা দিন, আশার ফুল আমার বিরহী বকুল ভোরের সোনালী রোদে খুঁজে তোমায় মনিনী! গোধুলী ধোঁয়ায় প্রাণ আকুল। তোমার নোলক ঝরা স্নিগ্ধ সুখে কেন ছিল মেঘের উঁকি ঝুঁকি? কেন বৃষ্টির এতো অয়োজন শেষে অনন্ত খরার এই নিপুণ ফাঁকি। মনিনী! সন্ধ্যার আকাশে আলোকময় নক্ষত্রের মতো জেগে থাকো, পৃথিবীর একান্ত উপগ্রহের মতো তোমার বুকে আগলে রাখো। ৫.এই চৈত্র সন্ধ্যায় এই চৈত্র সন্ধ্যায় মনিনী তুমি নিয়ে এলে শীতের ভোর প্রচণ্ড ঘামের মধ্যে আমি হিম হতে থাকি জমে যেতে থাকি ডিপ ফ্রিজে রাখা জলের মতো.... চারিদিক থমথমে, এক আঁজল হাওয়ার সন্ধান নেই ফিরবার পথটুকুও ধোঁয়াটে, ধুলোমলিন কোটি মানুষের এই শহরে ঝুম বারিধারার মতো সমুখে দাঁড়ালে তুমি..... ৬.এতো আপত্তি কেন মনিনী! তোমার সবকিছুতেই এতো আপত্তি কেন মনিনী! ভালোবাসার মানুষটিকে পুরোটা বিলাও। যে মানুষটি তোমার জন্য কোটি কোটি মাইল হাঁটল পাড়ি দিল তপ্ত বালুময় মরুভূমি; একবার তোমার জন্য জেগেছিল, তারপর আজ অব্দি নির্ঘুম সত্ত্বা-অক্লান্ত নিবিড়; তার জন্য কেন এতো সব অজুহাত কেন এতো তাচ্ছিল্য, কেন গুটিয়ে রাখো হাত? একজন তোমার জন্য এই মরুভূমিতে বয়ে আনল শীতল ঝর্ণাধারা, মরা গাঙে বয়ে আনলো বর্ষার বাণের মতো স্রোতধারা, তোমার তপ্তময় জীবনে হলো অশোকবৃক্ষের ছায়া। তার জন্য কিসের এতো হিসেব তোমার? এতো অহেতুক কৌতুহলে কেন তারে ডুবাও? তোমার একটি ইচ্ছের কাছে যার উৎসর্গ বাকীটা জীবন কেন তারে এতোটা পোড়াও? মুহূর্তেই কেন শিরায় শিরায় বিঁষ ছড়িয়ে দাও? ৭.মন ভালো নেই মন ভালো নেই। কোটি কারণে মানুষের মনে বাধে বেহায়া অসুখ। কবির এ কী অসুখ, মসৃণ দুঃখ? জানালার গ্রীল গলে আসা শূন্য হাওয়া এক মরুভূমি বার্তা দিয়ে গেল- মনিনী ভালো নেই! কবিতার চরণে চরণে গাঁথা বিরহী বর্ণ মন ভালো নেই, আজ কিছু ভালো নেই। কলম কাঁপে কবির, হস্তাক্ষরের করুণ নিনাদ, তোমার মনের অসুখ থামায় গন্তব্য। মাকড়সার জালে আটকে পড়া ঘাসফড়িং ডানা ঝাপটায়, দেয়ালে হাঁটা টিকটিকিটা মলিন মুখো। মনিনী! তুমি ভালো নেই তাই কিছু ভালো নেই। ৮.মনিনী! আরো বেশি পুলক চাই এই ছোটাছুটি, এই কোলাহল এই যান্ত্রিকতা, এই মলিনতা যাপিত জীবনে এই এতোসব অন্তরায়; কেবল তোমার কাছে এলেই দুদণ্ড শান্তি পাই। মনিনী! আরো বেশি পুলক চাই খোপা খুলে দাও, সুখের বারান্দায় মেলে ধরো বেণী আমি বেয়ে বেয়ে উঠে যাই তোমার তীর্থে। ৯.পদ্মের মতো ফুটে আছো মনিনী! দিগন্ত ছোঁয়া জলের বুকে পদ্মের মতো ফুটে আছো মনিনী! হাওয়ায় দোলা পাঁপড়ির মতো দুটি ঠোঁট পথ থামায় পথিকের, গন্তব্য হারায়। আমিতো জলের বুকেই দিয়েছি ঝাঁপ ডুব-সাঁতার খেয়ে খেয়ে ক্রমান্বয়ে পদ্মফুলের দিকেই ছুট... বাতাসে মৃদ্যু জলের দোলায় দেহ দোলে দুলে ওঠে তোমার শ্রেষ্ঠ সম্বল, জলের বুকে আছি তবু পুড়ি অগ্নিতে কেবল একটিবার ধরা দাও! তোমার পাঁপড়ি ছুয়ে পুলকিত হবো বুকের ভাঁজে নেভাবো অগ্নি আমার। ১০.মনিনী! রাতে ঝরা শিশিরের মতো মনিনী! রাতে ঝরা শিশিরের মতো সতেজ করো আমায় দিবসের রোদে পুড়ে কঁচি ডগার মতো নুয়ে পড়েছি, মাটির দিকে ঝুঁকে পড়া এই কঁচি লতাকে টেনে তোলো আকাশের দিকে মুখ করে দাও, দিগন্তে বাড়িয়ে ধরো দৃষ্টি। জাগতিক বিষবাষ্পে শিশিরের বাড়ি তুষার হইয়োনা কিছুটা বর্ষণ হও, না হয় আমার জন্যই নেমে আসো, তোমার শিশিরে রয়েছে প্রাণ, ঘুরে দাঁড়ানোর জাদুমন্ত্র। ১১.মনিনী! সব ব্যস্ততাকে আরো কিছুক্ষণ থাকো, পাশাপাশি হাঁটি অগোচরে হাত ছুঁয়ে যাক তোমার হাতে। আরো কিছুক্ষণ এমন ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকি বাতাসে তোমার চুল এসে পড়ুক এই গায় একবার ছুঁয়ে দেখি, একবার সুবাস নেই গভীর করে। মনিনী! সব ব্যস্ততাকে দাও শীতকালীন ছুটি এই উদ্যানে মিষ্টি বিকেলে আরো কিছুক্ষণ থাকি, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, রাতের গহীন এবং তারও পর.. দুজনে যাপন করি নিরঙ্কুশ হিম সময়। রাতে নেমে আসা শিশিরের চাদর নিচে আমি খুঁজে নেব তোমার উষ্ণতা। আজ কোনো কাজ রেখ না, ভুল করেও টেনে এনো না ব্যস্ততা। ১২.মনিনী! এমন আলসে বরিষণে এই ফাগুনে এমন শ্রাবণের বৃষ্টি! মৃদু উষ্ণতা ভেঙে আবার জেঁকে বসেছে শীত, আবার খুঁজি সোয়েটার, তুলে রাখা কম্বল রোদে শুকিয়ে রাখা কড়কড়ে লেপের খুলি ভাঁজ; স্নান শেষে কাঁপি, খুঁজি এক চিলতে রোদ ঝুল বারান্দায়। মনিনী! এমন আলসে বরিষণে রোদ কোথায় পাই! তোমার বারান্দায় ফুলের টবে জমেছে পানি তবু পানি দেবার অজুহাতে আসো বারবার, ভেজা কাপড় শুকানো দেখার ভানে ক্ষনে ক্ষনে বারান্দায় দাও উঁকি। আমার বারান্দায় আমি রোদ খুঁজি এই বরষায়। ১৩.মনিনী! তোমার হাতের জাদু মনিনী! তোমার কাননের ফুল জানে তোমার হাতের জাদু, তোমার স্পর্শের গভীরতা; ওফুলের দিকে তাকিয়েই বলে দিতে পারি একবার তুমি ছুঁলে পরে কী হয়, কী উর্বরতা ছড়িয়ে পড়ে শিরায় শিরায়, মুকুলে-মুকুলে। যেখানেই তুমি রেখেছ হাত, ফুটেছে গোলাপ ফুটেছে জুঁই, চামেলি, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ; মরতে বসা গাঁদা গাছেও তোমার স্পর্শের পরে গাছময় ফুটেছে হলুদ গাঁদা, একটি দুটি ফুল ধরা অপরাজিতা গাছও ভরে উঠেছে ফুলে ফুলে। মনিনী! একটিবার যদি ওহাতে আমায় ছুঁয়ে দিতে পৃথিবীতে আমিও হতে পারতাম সুন্দর কোনো ফুল। ১৪.মনিনী! কেবল স্বস্তিটুকুই জাগতিক যাতনা মহা আয়োজনে ঘিরে থাকে আমার আঙিনা, আমার চৌহদ্দি যেথায় যেথায় আমার পদচিহ্ন পায় কেবল কাঁটা বিছায় নিপুণ কারুকার্যময়, এই কাঁটা ভেঙ্গেই রোজ হাঁটি, কাজে যাই। পৃথিবী বড়ই কণ্টকময়, খুব সামান্যেই পায় মধু অতি অল্প লোকের কাননে ফোটে বাসনার ফুল, যশ-খ্যাতি, প্রভাব-প্রতিপত্তি আরো নগন্য ভারি। মনিনী! কেবল স্বস্তিটুকুই আমার ভীষণ লোভনীয়; ওসব চাইনা কিছুই, যশ-খ্যাতি কিংবা প্রতিপত্তি আমি তো হাঁটতেই পারি মাইলের পর মাইল, তোমার পূর্ণতাটুকুর জন্য ছুটতে পারি ঝড়ের বেগে। আমার জন্য স্বস্তিটুকু রেখো, বাকী সব তোমার জন্য রেখ দাও। ১৫.মনিনী! একটিবার কাছে দৃষ্টি দাও এইদিকে দ্যাখো, একটিবার কাছে দৃষ্টি দাও; অতদূরে উঁচু ঘাড়ে কী এমন দেখছ মনিনী! পায়ের কাছেই তোমার পড়ে আছে রাজ্যের সুখ এতো আনন্দ, কোলাহাল, এতো স্নিগ্ধতা, এতো এতো পুলক, প্রত্যাশিত না পাওয়া। অদূরে মরীচীকার হাতছানিতে ডুবো না কাছের শুকনো পাতাটুকুও কুড়িয়ে নাও, ছন্দ পাবে তাতে, পাবে অস্তিত্বের ছায়া। হাত বাড়ালেই পেতে পারো ভোরের শিশির রাশি রাশি গাঁদা, গন্ধরাজ, কঁচি ঘাসের ছোঁয়া. পেতে পারো মসৃণ দুপুর, স্নিগ্ধ বিকেল তাপদাহে পেতে পারো দক্ষিণা হিমেল হাওয়া। তোমার হাতের কাছেই রয়েছে অসীম স্বর্গ একবার এইদিকে দ্যাখো, একবার হাতদুটাে বাড়াও। ১৬.মনিনী! একটি বার্তা তোমার জন্য হই চিন্তিত বৃষ্টিপূর্ব আকাশের মতো রই থমথমে ভাটা শেষে ফের জোয়ার আসা গুমোট নদীর মতো স্তব্ধ বানের জলে ভেসে যাওয়া সর্বস্ব হারার মতো অগ্নিকাণ্ডে শেষ সম্বল ছাই হয়ে যাওয়া দৃশ্য অসহায় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা মানুষের মতো। মনিনী! একটি বার্তা তো দেয়া যেত অনন্ত। বাতাসে পেতে আছি কান, পৃথিবীর সব শব্দ কানের কাছে হাতুড়ির মতো লাগে কেবল তোমার একটি বার্তা পাবো বলে মহাশূন্যে বাড়িয়ে আছি শ্রবণ ইন্দ্রীয়, পিনপতনের আওয়াজ বিকট লাগে কানে কেবল তোমার কোনো বার্তা আসেনি আজও। ১৭.মনিনীর জন্য সাতাণুচরণ তোমায় প্রাপ্তিতে কিছুটা হয়তো আছে বিষ ছুটে চলছি তবু সেই মোহে আমি অহর্নিশ। কণ্টক যতো বিছানো আছে পথে পথে সান্তনা এই শেষ প্রান্তে দেখা হবে তোমার সাথে। বাকীটুকু হোক না অভেদ্য কঠিন দুঽপায়ে মাড়িয়েছি সূঁচালো আলপিন অনুরোধ, বদন খানি কখনো করোনা মলিন! ১৮.মনিনী! আমার চোখে ব্যাকুল বসে আছি এই নির্জনে তোমারি আশে এই প্রকৃতির আহ্ববানে মন দোলে, মন ভরে না কী জানি এক অসীম শূন্যতা ঘাপটি মেরে তোমার আসন জুড়ে বসে আছে বড়ো পীড়াময়। মনিনী! আমার চোখে তুমী প্রকৃতির অপার মহিমা তুমি ছাড়া বড়ই মলিন এই সবুজ, এই নদী, এই ঝর্ণা দূর থেকে ভেসে আসা রাখালের সুরও বড়ো বেসুরো প্রকৃতির এই অবিচ্ছেদ্য তোমায় ছাড়া প্রকৃতি জমেনা। ১৯.মনিনী! এই মায়াটুকুর মর্মতা তোমার অাসা-যাওয়ার পথে বিদ্যুতের খুঁটির মতো নিরব-নিথর একপাশে অপলক তাকিয়ে থাকি, না দেই কোনো শিস কিংবা না বাজাই তুড়ি কোনো উটকো বাক্য কভু দেইনা ছুঁড়ে, তোমার চলার পথে হইনা কখনো বাঁধার কোনো হেতু, কেবল একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে আমি আরো দীর্ঘজীবী হই প্রতিদিন সতেজ বেঁচে উঠি মাটি ফুঁড়ে কচিপাতার মতো। যদি পারতাম, হয়তো আমি লাল মখমলের গালিচা হতাম তোমার পথে পথে, যেন ধূলোর আঁচড় না পড়ে প্রখর রৌদ্রে অদৃশ্য ছায়ার মতো হতাম মেঘমালা। মনিনী! এই মায়াটুকুর মর্মতা কখনো বোঝনি, কালো চশমার আড়ালে নিজেকে লুকিয়েছো বারবার। তবু পথ ছাড়িনি আমি, পথিক হবো বলে আজও তোমার পথে সেই দাঁড়িয়ে আছি যেমন ছিলাম, একটিবার মুখ তুলে তাকাও যদি আর কীবা থাকে আমার পাওয়ার বাকী! ২০.মনিনী! তোমার শিশুসুলভ আচরণে মনিনী! তোমার শিশুসুলভ আচরণে সবাই বিরক্ত পরিবার, তোমার বন্ধুসমাজ এমন কী পরিচিত কেউ অথচ আমি ওটুকুর জন্যই বারবার তোমার প্রেমে পড়ি মাঝে মাঝে এই ন্যাকামিটুকুই পরম শুদ্ধ মনে হয়। কোনো কিছুই একবারে তোমার হয়ে ওঠেনা বারবার বহুবার এলেমেলাে করো আবার আপন মনে খুঁটে খুঁটে করো পৃথিবীর শুদ্ধ কর্ম, চলতে গিয়ে হাইহিলে হোঁচট খাও, যখন-তখন কাঁধ থেকে খসে পড়ে ভেনেটি ব্যাগ বুকের কাপড়টুকুও ঠিক পারো না আগলে রাখতে। যখন মন চায় ঝাঁপ দাও পুকুরে, ইচ্ছে হলেই খালি পায়ে হাঁটো দেয়ালে দেয়ালে.... একটি ঘাসফড়িং দেখেও মুগ্ধ হও হাতে আকাশের চাঁদ পাবার মতো, আবার পাতা দিয়ে বাঁশি বানিয়ে আপন মনে তোলো তাতে মায়ার সুর। অনেক বিরক্তের কারণ তুমি সবার কাছে আর আমার কাছে তুমি পরম সাধনার মুগ্ধতা। ২১.মনিনী! তোমার সৌন্দর্য্য মন বাতায়নে বুনেছি বাবুয়ের বাসা দক্ষিণা হাওয়ায় দোলে নিপুণ স্বপ্নেরা মনিনী! তোমার সৌন্দর্য্য ছড়িয়েছে জীবনের বাঁকে বাঁকে আমূল আদিগন্ত। যেখানেই রাখি হাত যেন পুষ্প ফোটে কেবল তুমি ছুঁয়েছ বলে সব গড়ল কাঙ্খিত মৃগ বড়ই বাহারি বাসনাময় এই অন্ধ এক তুমী তারে করো আলোকময়। ২২.মনিনী! তুমি থাকলেই এই তোমার কাছে থাকলেই অামার দারুণ সময় সব সুরই যেন প্রাণের সুর হয়ে বাজে সব গানই যেন অনেক প্রিয় গান, এই সকালের রোদটুকুও যেন ভীষণ উপভোগ্য। মনিনী! তুমি থাকলেই পাতায় পাতায় শিশির এই কানন জুড়ে চির সবুজের জয়ধ্বনি এই আসা-যাওয়ার পথটুকু ভারী মসৃণ এই বরফ হিমটুকুও বেজায় সহনীয়। ২৩.মনিনী! এই অসুখ মনিনী! এই অসুখ আর কে সাড়াতে পারে বলো! চিকিৎসা বিজ্ঞানও যেখানে মেনেছে হার আলট্রাস্নো, ইসিজি, ইটিটি, রক্ত পরীক্ষা এতো এতো! চিন্তিত চিকিৎসক-কপালে পড়েছে ভাঁজ এমন কী এক অসুখে কাতর অামি? স্বজনের উৎকণ্ঠায় ঘরময় পিনপতন নিরবতা আপদমস্তক চঞ্চল এই আমি কেন হঠাৎ নেমে এলো এমন গাঢ় অন্ধকার! বৃথাই স্বজনের এই আহাজারি, এই উৎকণ্ঠা এই ছোটাছুটি, হাসপাতাল, ক্লিনিক হন্তদন্ত ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, ডাক্তারের চেম্বার। স্বজনদের তো নেই জানা আমার সুস্থতা কেবল তোমার কাছেই গচ্ছিত, কেবল একটি বার তুমি এই হাত ছুঁয়ে দিলে ফের আমি পুনঃজন্ম পেতে পারি ফের পেতে পারি তাদের তৃপ্তিময় জীবন। ২৪.মনিনী! কেবল তুমি আসলেই অপেক্ষায় ছিলাম অশোক গাছের মতো শতাব্দী পেরিয়ে একদিন তুমি ঠিকই ডালা ভরা সফেদ ফুল নিয়ে ফিরবে। অনেকেই তো মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে গেলো কই! আমার জন্য তো আজও ভালো কিছু হলো না! আজও তো আমার সেই উসকো-খুশকো চুল ময়লা পরিচ্ছদে আবৃত আশরীর, এলোমেলো দাড়ি-চুলে অন্ধকারে পরে আছে প্রিয় বদন, অাজও অনমনে অগোচরে তোমার নামটি ধরেই ডাকি যখন তখন। মনিনী! কেবল তুমি আসলেই হতে পারতাম আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সুপুরুষ, কেবল তুমি হাসলেই বৃষ্টি ধুয়ে দিতো শতাব্দীর এই অবহেলিত আচ্ছাদন, কেবল তুমি এসে সম্মুখে দাঁড়ালেই হতে পারতাম আমি তাবত রমনীর ঈর্ষার পুরুষ। ২৫.ভালোবাসায় কী এতোটা হিসেব চলে বলো! আমার তো ইচ্ছে হয় বেলা-অবেলায় কড়া নাড়ি তোমার দরজায়, তুমি কেবল দাওনা সায়। এতোটা কাছে আসার পর এতোটা ছুঁয়ে দেয়ার পরও ছোট্ট করে এক কোণে লিখে যাও ঽশর্ত প্রযোজ্যঽ। তোমার বাড়ি অবদি পথে পথে তুলে দাও অদৃশ্য দেয়াল। মনিনী! ভালোবাসায় কী এতোটা হিসেব চলে বলো! তোমার বাতায়নে যতই ঝুলাও গারদের পর্দা আমার চোখ তো পড়ে আছে তোমার কামড়ায়। কেবল দেহের ভেতর খরস্রোতা নদীতে পড়েছে বাঁধ, একটিবার ছুঁয়ে ফের কেন এমন অচেনা হয়ে যাও? ২৬.মনিনী! নিদ্রা ভেঙ্গে ফিরে আসুক দখিনা হাওয়ায় পাঙশি নাওয়ের পালে চড়ে মুঠো মুঠো বিশুদ্ধ বাতাস, কিছুটা সৌখিন আবেগ এই নদীর বালুচরে ধেয়ে আসুক উম্মাদ ঢেউ; খড়ম খুলে তপ্ত বালুতে খেয়ালি প্রেমিক এক ডানা মেলে ঘুড়ি হবো বলে চেয়ে আছি ধু-ধু নদীর বাঁকে। মনিনী! নিদ্রা ভেঙ্গে নক্ষত্রের আলোটুকু দিয়ে যাও তুমি ছাড়া এই বালুচর ছোঁবে না জল এই বাতাস মাতবেনা মধুময় ভালোবাসায়, আমি কেবল ডানা ভাঙা পাখির মতো পড়ে রবো নাটাই ছিন্ন ঘুড়ি ওড়ার আশায় অাজনম। ২৭.মনিনী! তোমার চোখের সম্মুখে এই শীতের রজনী বুঝি নিয়ে যায় হিমালয়ে কম্বলের ভেতর তার বরফ জল হিম হাওয়া বিছনায় শুয়ে আছি, চারিদিকে এতো উষ্ণ সরঞ্জাম তবু কেন এতো কাঁপছি আমি, স্নায়ু কেন এতো শীতল! বাইরে বৃক্ষের পাতায় থেমে থেমে পড়া শিশির বিন্দুর মতো নিঃশ্বাস বুঝি ক্রমান্বয়ে হারিয়ে ফেলছে ছন্দ। আমি কী তবে হিমালয়ের বরফ হতে চলেছি! আমি কী তবে আজন্মের তরে হয়ে যাবো শীতের ভাস্কর্য! মনিনী! তোমার চোখের সম্মুখে এই আমি ক্রমান্বয়ে নিথর বরফের ভাস্কর্য হয়ে যাচ্ছি, তোমার আঙুলের একটু ছোঁয়াই পারে সব ভন্ডুল করে দিতে ফের আমি ফিরে পেতে পারি চঞ্চল জীবন। এক মুঠো উষ্ণতা দাও আজ এই শীতল জমিনে কেবল একটিবার বোতাম খুলে উম দাও এই বরফ গলে ভেতরে বহুক সুখের ঝরণা ধারা। ২৮.মনিনী! যদি বুলবুলি হতেম এতোটা কাছে আসার পর এতোটা আপন হবার পর যখন দুই তীর মেলে এক সাঁকোতে, তারপরে কী আর এক পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা যায় বলো! স্বপ্নের সাঁকো পেড়িয়ে সেই কবেই তো পৌঁছে গেছি তোমার তীরে, তোমার যত্নে পোষা কুসুম আঙিনায়। সরষে ক্ষেতে হলুদ সরষে ফুলের মতো এই সবুজের বুকে তুমি জেগে থাকো, বাতাসে খাও দোল, কাকতাড়ুয়ার ডানায় বসে বুলবুলি এক মুগ্ধ দেখে দেখে তোমার কপোলের টোল। মনিনী! যদি বুলবুলি হতেম নদীর জায়গায় নদী, সাঁকো থাকতো সাঁকোতে আমি থাকতাম কেবল তোমার বন্দি খাঁচায়, এই এতো বড়ো আকাশের কী প্রয়োজন বলো তোমার মনের খাঁচাই তো আমার অসীম আকাশ। ২৯.মনিনী! দীর্ঘ এই দশ বছরে দীর্ঘ দশটি বছর ধরে হেঁটেছিলাম পাশাপাশি, কাছাকাছি, বাহুর সাথে বাহু মিশে একই ক্লাসরুমে, একই বেঞ্চে, একই অনুষ্ঠানে একই পথের ধুলোয়, একই ঘাসের বুকে। দীর্ঘ দশটি বছর একই শহরে তুমি-আমি রিক্সায় হুট তুলে ভেজা বরষায়, কফি হাউজের নীল আলোর নীচে সকাল-সন্ধ্যা রেষ্টুরেন্টের নাস্তার টেবিলে কলেজ রোডের অপুর দাঽর চায়ের দোকানে। দীর্ঘ দশটি বছর কীতর্নখোলার তীরে দপদপিয়া ফেরিঘাট ঘেঁষা সফেদ কাঁশবনে মাইলের পর মাইল পিচঢালা পথে প্রথম এই শহরে আসা অটো রিক্সায় হালিম ভাইয়ের ফাস্টফুডের দোকানে। মনিনী! দীর্ঘ এই দশ বছরে কেবল একটি বার বলেছিলে পাশাপাশি রিক্সায় এই আমায় ঽখুব ইচ্ছে হয় নাকি আমার হাতটা একটিবার তোমার ছুঁয়ে দেখতে! ঽ তোমার ছিল কেবল একটি বাক্য আর আমার ছিল তা স্বার্থক জনম, আজন্মের কামনা। ৩০.মনিনীর জন্য অণুকাব্য (১) চেয়ে দেখো মনিনী, ফেলেছ চরণ তাই আমার আকাশে পূর্ণিমা। (২) কেবল এইটুকুই চাই, ভালোবেসো এমন যার অন্ত নাই। (৩) আমার তুমি জোছনা, ঘোর অমাবস্যায়ও ছেড়ে কভু যেওনা। (৪) তুমি একটা নদী, আমি তাহার জল বইছি নিরবধি। (৫) এই চন্দ্র এই তারা, আমার আর কে আছে বলো তুমি ছাড়া! (৬) স্বপ্নের মতোই তুমি, চোখের আড়াল হলে হৃদয় মরুভূমি। (৭) কী দেবো উপমা, তোমার তুলনা তুমি নন্দিত মনিনী। (৮) চারিদিকে হাজারো কৌতুহল, কী বলবো কাকে শুকনো বুকে তুমি বৃষ্টির জল। ৩১.মহাজীবন মনিনী! কেবল একটি গোলাপের প্রত্যাশা ছিল, তোমার কাছে হাত বাড়িয়ে চাইতেই পৃথিবী অবাক করে দিয়ে এত্ত এত্ত ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিলে আমার দুঽহাত, আমার আঙিনা পা ফেলে আমার হাঁটার পথ, আমার বসত ভিটা যে দিকেই যতদূর চোখ যায় যেন ফুলের অরণ্য। এক আঁজল জল চাইতেই দিয়েছ এক মহাসমুদ্র একমুঠো জোছনার বাসনায় দিয়েছ মধূ পূর্ণিমা। একটি মুহূর্ত চেয়েছি কেবল ভালোবাসার জন্য অনন্ত জীবন তুমি নিরঙ্কুশ সপেছ আমায়। এতোটুকু স্বস্তি নিয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছি বলে এ অধমকে দিয়েছ তুমি এক মহাজীবন। ৩২.কী করে বাঁচি! একবার হাত ধরে যদি ফের ছেড়ে দাও এই অন্ধকার গলিতে তবে বলো কী করে হাঁটি! স্পর্শের সুখটুকু শিখিয়ে যদি দেয়াল তুলে দাও ভালোবাসার এই কাঙাল বলো কী করে বাঁচি! মনিনী! পাথরের বুকে সবুজ বাগান করে ফের কেন পাথরেই ফিরিয়ে দাও! এই অবুঝ অনুভূতিকে লাই দিয়ে দিয়ে স্ববুঝ করে আজ কেন গলা টিপে শ্বাস রুদ্ধ করতে চাও! চেয়ে দ্যাখো এখনও রয়েছি দাঁড়িয়ে একা নিঃস্ব অন্ধকার সেই অচেনা গলিতে... তোমার তোলা দেয়ালের কার্ণিশে কাঙাল এক, এই স্ববুঝ অনুভূতিরা আজ আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। মনিনী! কেবল ভালোবাসার জন্যই এই আকুতি এর জন্যই তোমার কাছে হেরেছি বারবার... ৩৩.মনিনী! কোথায় পৌঁছে গ্যাছো তুমি স্বপ্নগুলো যত্ন করে রেখেছি সাজিয়ে যেমন যত্নে সাজাও প্রিয় শাড়ি থরে থরে লাল-নীল-হলুদ-কালো এবং বাদামী, মনিনী! তোমার জন্য আজন্মের স্বপ্নগুলো জমিয়ে রেখেছি বুকের ভেতর অনেক দামী। কবিরা এমনই বড়ো বেশী স্বপ্নবাদী হয় মর্তের প্রেয়সীকে নিয়েই অলৌকিক স্বপ্নের আনাগোনা, আমি তোমাকে ঘিরেই বুনেছি যতো স্বপ্ন আমার আর কিছুইতো আসেনা কখনও ভাবনায়। ভেবে দ্যাখো, কতোটা পৌঁছালে পর অবশিষ্ট থাকেনা কিছু আমার ভেতর সেই কোথায় পৌঁছে গ্যাছো তুমি! ৩৪.রেগে আছো মনিনী! রেগে আছো মনিনী! এইটুকু দেরি করে ফিরেছি বলে এতো অভিমান! অথচ তোমার জন্য অপেক্ষা করতেই আমার যতো আনন্দ, যখন তুমি এসে শেষে আমার সম্মুখে দাঁড়াও হাজার বছরের অপেক্ষাও এক মুহুর্তের মনে হয়; আরো যদি এককোটি বছরও অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় কোনো খেদ নেই তাতে, নেই কোনো অহেতুক অজুহাত। আমি তো জানি তুমি ফিরে আসার আনন্দ কতোখানি অনন্ত খরায় একফোঁটা বৃষ্টি পেলে উচ্ছাস কতোখানি। ৩৫.এতো কেন মলিন তবে আজ তুমি মনিনী! এতো কেন মলিন তবে আজ তুমি মনিনী! রোজকার ভোরের আলোর মতো মুখখানি দেখে দেখে জেগে উঠি সতেজ-সবুজ পল্লবের মতো কেন তবে ওমুখ জুড়ে এতো মেঘের ঘনঘটা! তুমি তো জানো, তোমার এতোটুকু মলিনতা চৈত্র দুপুরের রোদের মতো আমাকে পোড়ায়, শীতের নদীর মতো শুকিয়ে যায় বুকের জমিন হেমন্তের হলুদ পাতার মতো মুচড়ে যায় মন। কেন তবে বেদনার নীল মাখো তোমার গায় কেন একটি নদীকে এমন শুকিয়ে যেতে দাও কেন এই সবুজ ভূমিতে তপ্ত রোদের উত্তাপ ছড়াও? তোমার আলোকিত মুখখানি এই গ্রহকে করে জোছনাময় অন্ধকার জমিনে তোমার আলোতেই পথটুকু দেখতে পাই। ৩৬.এই আহ্বান, এই আয়োজন এই আহ্বান, ভেতর বাড়ি তোমার এই আয়োজন রবীন্দ্রনাথের গীতিকবিতার মতো তোমার চলার ধরণ অবিরাম বর্ষার পরে একটুকরো সোনালী রোদের মতো মনিনী! তোমার কাছে ছুটে যায় বেপরোয়া মন। পলক ফেলোনাকো, তোমার সাজ ঘরের দরজায় তুলোনা দেয়াল; তোমার আয়নায় একটিবার দেখতে দাও প্রিয় মুখ প্রিয় কিছু মুহুর্ত, প্রিয় কিছু প্রাপ্তিময় রঙনি সময়। ঽঅমন করে তাকিয়োনা মনিনী! ঽ অমন করে তাকিয়োনা মনিনী এই বুকের বরফ গলে তবে ধেয়ে আসবে সুনামি; বেড়িবাঁধ উপচে আসা ভালোবাসার প্লাবনে ডুবে যাবে তোমার বসত বাড়ি.... তোমার বুকের শীতল পরশ দাও ভালোবাসায় বিভোর থাকি, জমে থাকি বুকের বারান্দায়, ছুঁয়ে থাকি এই বুকের মাটি। ৩৭.ঘাসের বুকে বসো মনিনী! ঘাসের বুকে বসো মনিনী! আমি স্বর্গে মাথা রেখে আকাশ দেখি। তোমার রঙিন ওড়না খুলে বানিয়ে দাও ডানা আমি উড়ে উড়ে ওআকাশের নীল ছুঁই, মেঘেদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসি তোমার স্নানের বিশুদ্ধ জল। দেখ মনিনী! আজ ঘাসেরা পেতেছে আঁচল আজ মেঘেরা ধরেছে অথৈ জল আজ আকাশও সেজেছে নীলে নীলে। আরো কিছুক্ষণ বসো এমন মাটি ছুঁয়ে আরো কিছুক্ষণ মাথা রাখি তোমার কোলে। ৩৮.মনিনী! তোমার বুকের ভাঁজে কতশত সমুদ্রের ঢেউ ভেঙে ভেঙে তোমার বুকের সমুদ্রেই আজ ভিড়েছে জাহাজ টালমাটাল নাবিক আমি নোঙর হাতে দুলছি, মধ্যাকর্ষণ শক্তিরা আজ নিয়েছে ছুটি। প্রজাপতির ডানায় উড়ে উড়ে ঘুরছি বেজায় তীরে এসে তরী শেষে এ কোন দোলায়! মনিনী! তোমার বুকের ভাঁজে কাঁপে মন ভীরু নাবিক বুঝি আজ হারাবে দিশা ঢেউ থামাও, দুহাত বাড়িয়ে আমায় মাটিতে রাখো আমায় একটু একটু করে ভীষণ ভালোবাসতে দাও। ৩৯.আমি তবে লুকাবো কোথায়? এই সবুজ ঘাস, এই মেঠো পথ শুকনো পাতা পোড়ানো ধোঁয়ার কুণ্ডলির মতো কুহেলিকা ঘাসের ডগার শিশির, এই হিম হাওয়া কেবল তোমাকেই ছুঁতে চায় মনিনী! ঘাসেরা ছুঁটে আসে, মেঠো পথ দাঁড়িয়ে থাকে ঠায় তোমার উষ্ণ চাদরের তলে খোঁজে এতোটুকু আশ্রয়। এতোকিছু আমার প্রতিদ্বন্দ্বী! এই কনকনে হিমেল হাওয়ায় এই শিরশিরে কাঁপানো বেলায় এই আবছা-ধোঁয়াটে কুহেলিকায় আমি তবে লুকাবো কোথায়? ৪০.তোমার হাত ছুঁয়েছে তোমার হাত ছুঁয়েছে গাল আমি চেয়ে আছি বহুকাল, মনিনী! সেথায় যেতে আমার বুঝি লাগবে মহাকাল! তোমার নাকের ঐ নোলক দূর থেকে দেখি এক ঝলক, কাছে যেতে হারিয়ে ফেলি যদি চেয়ে থাকি তাই অপলক। ৪১.দরজাটা বন্ধ কেন মনিনী! সারাটা দিন খুঁজে খুঁজে এই তোমার দরজায় এসে পড়েছি, দরজাটা বন্ধ কেন মনিনী! তুমি তো জানো কতটা অথর্ব আমি তুমি ছাড়া, মানুষ কতো কিছু ভেবে বসে আছে! তুমি তো জানো একপলক না দেখে তোমায় আমি আমার চোখ খুলিনা, তোমার স্পর্শ না পেলে সারাটা দিনে শীতের ঝরা শুকনো পাতার মতো মূল্যহীন এ সময় আমার। যখন দরজায় এসে নেড়েছি কড়া তুমি বললে- আজ দেখা হবে না! ৪২.ভালোবাসার মানুষগুলো পৃথিবীর সব প্রিয় কিছু তুচ্ছ করে তোমার বুকেই খুঁজেছি শেষ সম্বল। আমাকে লুকিয়ে রাখো সখি তোমার আরো গভীরে। ভালোবাসার মানুষগুলো যদি এমন হতো, তবে পৃথিবীর এই অনাসৃষ্টি নিপাত যেত সেই কবে..... প্রতিটি মানুষরে মুখেই ভেসে উঠত এক একটা মন্দির। ৪৩.জানালায় কী দেখছ মনিনী! জানালায় কী দেখছ মনিনী! যখন পেয়ারা গাছে ধরেনি মুকুল যখন শাখায় পড়েনি বাঁক, তখন থেকেই তোমার মনের জানালায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। জানালায় তুমি আমার আকাশই দেখতে পাবে কেবল তোমার জন্যই সাজানো তা সাত রং ছাড়িয়ে তোমার ভালোলাগার হাজার রং তুলিতে আঁকা। আজ তোমার নাকের ফুল তোমার রঙিন ওড়নাকে বলো- ওরাও আঙুল উচিয়ে বলবে তোমার জানালায় চিরকাল আমী ছিলাম। ৪৪.কোমল উষ্ণতা নিয়ে আসে মনিনী চলছে শিশিরের সময়.... সন্ধ্যার ডানায় চড়ে নামে কুহেলিকা হলুদ সোয়েটার আর কালো শালে মোড়ানো কোমল উষ্ণতা নিয়ে আসে মনিনী। এই হিম সময়ে হিমযাপন বুঝি হলো আরো মধুময়, শিশির স্নাত এই আঙিনায় মৃদ্যু কম্পিত এই বাহুডোরে বিজয়ী ওড়ে তার উষ্ণ পতাকা। যদি পাশে থাকো মনিনী! যদি ছুঁয়ে থাকো হিমালয়ের বরফ আমি করবো জয়। ৪৫.সমুদ্র এবং মনিনী সমুদ্রের জল ছুঁয়েছে চরণ তোমার আমি সে জলেই কাটছি সাঁতার জল শুনেছি নোনা আমার কাছে এ জল যেন বহুদিনের চেনা। ধন্য এই বালুচর যার বুকে পড়েছে তোমার চরণের ভর। যদি সমুদ্রের জল হতেম যদি হতেম সৈকতের বালুরাশি! মনিনী! তবে ধন্য হতো জীবন ধন্য হতো আজন্ম ভালোবাসার কাঙাল এক কবি। ৪৬.কালো শাড়িতে মনিনী বহুদূর পথ হেঁটে হেঁটে পা ফেলেছি আলোকিত এই উপত‌্যকায়, মোমের নিচে অন্ধকার থেকে বেড়িয়ে ছুঁয়েছি তোমার নন্দিত পূর্ণিমা। ঘোর অমাবস্যায় জোনাকির আলোর মতো কালো শাড়িতে তুমি মোহময় মুগ্ধতা, মনিনী! তোমার এই উপত্যকায় দাও ঠাঁই, আমার এই ক্লান্তি, এই নিরব অন্ধকারটুকু জোনাকির আলোয় ভরিয়ে দাও! ৪৭.কেন ঢেকে রাখ কেন ঢেকে রাখ চোখ, এই ঠোঁট শিশির ভেজা কোমল ঘাসের ডগার মতো তুলতুলে কপোল! তোমার এই আঁচলটুকু বোশেখের মেঘের মতো কেন ঢেকে রাখে আঁধার ভূখন্ডের মৃদ‌্যু জোছনা! এক মহাকাল পাড়ি দিয়ে এসেছে পৃথিবী চাঁদের চমকিত-পুলকিত বদনের দিকে চেয়ে চেয়ে, যতোক্ষণ এই স্নায়ুর স্পন্দনটুকু টের পাই তোমার মুখের দিকে তাকিয়েই কাটাতে চাই। আঁচলটুকু সরিয়ে নাও, দুচোখ ভরে দেখতে দাও মধুপূর্নিমা। ৪৮.মনিনী! কেন বিশ্বাসের বাড়ি করছ লুট! ভালোবেসে বেসে তীর্থ ছুঁয়েছি, আজ কেন বিশ্বাস নিয়ে ঘনঘটা! তোমার জন্য হলুদ গাঁদার কানন সাজাতে হলুদের পিছু ছুটতে গিয়ে হয়তো কিছুটা সময়ের দূরত্ব.... মনিনী! কেন বিশ্বাসের বাড়ি করছ লুট! যেখানেই থাকুক জলরাশি সমুদ্রে নির্ঘাত হবেই ফেরা, বাষ্পিত জল মাটির বুকে ফিরবেই বৃষ্টি ধারায়। ৪৯.মনিনী! তোমার উষ্ণ নিঃশ্বাস তোমার আরশিতে বারবার খুঁজেছি নিজের মুখ শীতের ধুম্র কুহেলিকা আছড়ে পড়ে সে আরশিতে, গাড়ির কাঁচ মোছা হাতদুটি অবিরাম মুছে যায় কুহেলিকা আবছা আলোয় যেটুকু ভেসে ওঠে অবয়ব নিজের অস্তিত্ব মেলাতে পারিনা। মনিনী! তবে কোথায় রেখেছ ভালোবাসা? হৃদয়ের কোন কুটীরে বন্ধ জানালায়? টবে ফোঁটা রঙিন গোলাপের মতো চেয়ে আছে মন তোমার উষ্ণ নিঃশ্বাস যদি একটিবার ছুঁয়ে যেত আমায়! ৫০.চেয়ে দ্যাখো মনিনী! চেয়ে দ্যাখো মনিনী! দু'হাত ভরে এনেছি রাশি রাশি হলুদ গাঁদা, একটা হলুদ শাড়িও এনেছি লুকিয়ে যদি সায় দাও তো সাড়া অঙ্গে তোমার হলুদ জড়াই। এক শীতের বিকেলে তোমার খোঁপায় ছিলো একগুচ্ছ হলুদ গাঁদা, একটি হলুদ পাখি দেখে নেচে উঠেছিলে তুমি, হলুদ তোমায় এতোটা পুলকিত করে-এতোটা দোলায় তোমাকে! মনে মনে তোমার জন্য একটি হলুদ পৃথিবী বানিয়েছি তোমার পুলক দেখে দেখে বাকীটা জীবন কাটাবো বলে।
৫১.নন্দিত মনিনী!

চোখ মেলে দ্যাখো নক্ষত্রের নন্দিত মনিনী!
ভেতর বাড়ি তোমার কী দিচ্ছে দোলা?
শুকনো পাতার নূপুর নাকি শিশিরের ছন্দ!
সময় হয়তো মন্দ, সব দ্বন্দ্ব বিভাজন ভুলে
তোমার তীরেই ভিড়িয়েছি ভালোবাসার নৌকো,
এ বালুচরে একটিবার ফেলে দ্যাখে পা
নির্ঘাত এ মরুদ্যান ভরে উঠবে সফেদ কাঁশফুলে।

৫২.তোমার এই নিরঙ্কুশ হাসিটুকু

কোনো একদিন পাহাড়ি ঝরণা আমায় মুগ্ধতা দিয়েছিলো
পাখিদের কণ্ঠ দিয়েছিলো কিঞ্চিৎ প্রশান্তি
প্রজাপতির পাখায় পাখায় খুঁজেছি তবু মোহময় মুগ্ধতা।
সব কিছুই হারিয়ে দিলো তোমার এই নিরঙ্কুশ হাসিটুকু
পলকহীন চেয়ে আছি, এ হাসিটুকুই ভুলিয়ে রাখে
আমার সব না পাওয়ার বেদনা।

৫৩.তোমাকেই দেখতে পাই

বারান্দায় উড়ে আসা চড়ুইয়ের উচ্ছলতা
বারবার তোমাকে মনে করিয়ে দেয়,
ভুলে যাবার বাহান্ন রাস্তা বাতলে দিয়েছ আমায়
কিন্তু এই চড়ুঁইকে কী করে থামাই বলো!
আমি তো বারান্দায় তোমাকেই দেখতে পাই।

৫৪.মনিনী তোমার জন্য

সারাটা দিন ঘাসফড়িংয়ের পিছু ছুটে ছুটে
এই দ্যাখো তোমার জন্য দুঽহাত ভরে এনেছি চঞ্চলতা
সন্ধ্যার হাওয়ার মতো গুমোট থেকোনা মনিনী!
তোমার জন্য মুঠো মুঠো জোছনা আনতে যাচ্ছি-
রাতের আগেই ফিরব তোমার নিঃসঙ্গ আঙিনায়,
চোখের জলটুকু মুছে নাও নীলিমা, তোমার চিকন ঠোঁটে
নির্ঘাত উড়ে এসে বসবে সুখের এক রঙিন প্রজাপতি।

৫৫.মনিনী ভালো থেকো

তোমার শহরে বাতাসের গায়ে নখের আঁচড়
বিশুদ্ধ বাতাসে লোভী পুঁজিপতিরা দেদারছে ছড়াচ্ছে বিষ,
একটি আদর্শ শহর তোমাকে দিতে পারিনি এটা আমার ক্ষমাহীন ব্যর্থতা
এমন হাজারো ভালোবাসা- ক্ষত বাতাসে আক্রান্ত
তাঁর কাছে একটু জল চেয়েছি তোমার অক্সিজেনটুকু ধুয়ে দেবো।
খেয়ালী ক্ষমতার ঈশ্বরেরা অর্থের সিঁড়ি বেয়ে আকাশ ছুঁতে চায়
এই অপার পৃথিবীর কোমল মানুষগুলো তুচ্ছ ভারী।
তোমার জন্য বুক পকেটে একটুখানি বিশুদ্ধ বাতাস রেখেছি
তুমি ভালো থেকে মনিনী...আমি আসবো....

৫৬.বিরহ যাপনে

তুমি বড়ো বেশি পটু বিরহ যাপনে
আমিতো চাইনা কোনো বিরহ তোমায় ছুঁয়ে থাকুক
জানালা খুলে নিয়ে আসি তোমার জন্য রাশি রাশি রোদ্দুর
তুমি কেবল মেঘের পানেই আপন মনে তাকিয়ে থাকো
যখন দুহাত ভরে গোলাপ এনে দেই-
কেন যে বার বার কাঁটার কথা বলো!
আমি তোমার মুখে দেখতে চাই মধুপূর্নিমা
তুমি হাত বাড়িয়ে অমাবস্যাকেই করো নিমন্ত্রণ।

৫৭.লাজুক

এতো কেন লাজুক তুমি মনিনী
হাত ছুঁতেই লজ্জাবতি লতার মতো গুটিয়ে যাও!
তোমার জন্য মেঘালয় থেকে এনেছি ঝরণার জল
স্নান শেষে দুজন লেকের জলে ভাসাবো নাও।

৫৮.স্বপ্ন আঁকি

আমি স্বপ্ন আঁকি
তুমি তাতে মাখাও রং,
যখন তুলি ছোঁয়াই
দেখাও তুমি ঢং।
তবু ভালোবাসি রং,
কখনও কখনও বড়ো বেশি
ভালোলাগে
তোমার এইটুকু ঢং।

৫৯.মাঝে মাঝে

মাঝে মাঝে বেহায়া পবন
দোলায় মন
বুকের দেয়ালে ঝোলানো ছবিটা
জাগায় কাঁপন
হয়তো আরো ভেতরে
যেতে চায় মন
হয়তো অধিক ভালোবাসি বলেই
হয় এমন

৬০.ভালোবাসি খুব

আচ্ছা, আমি তবে চুপ
যতোই রাগো না তুমি
তোমায় ভালোবাসি খুব।
কথায় হয়তো বাড়বে কথা
বলে ফেলবে হয়তো যা-তা
আমি তখন কষ্ট পাবো খুব।
৬১.বাতায়ন রেখেছি খুলে

বাতায়ন রেখেছি খুলে
তোমার গায়ের গন্ধ যদি পাই,
হেয়ালি করুক লোকে, যে যাই বলুক
অামি তো তোমাকেই চাই

৬২.ভালোবেসে

ভালোবেসে যখন বাড়িয়েছি হাত
একরাশ অবিশ্বাস
সরিয়ে দিলো তোমার হাত।
যদি ভালোইবাসো
তবে কেন এই অবিশ্বাস?
আমি তো আপদমস্তক বিলাতে পারি,
তুমি কেন সামান্য হাতটুকুও
সরিয়ে নাও!

৬৩.চাপে পড়ে

যতো সব অখাদ্য খেয়ে যাচ্ছি চাপে পড়ে
নিয়মিত হচ্ছে বদহজম
অপেক্ষায় থাকুন যারা খাওয়াচ্ছেন
পরিনাম নিশ্চয়ই হবেনা শুভম্

৬৪.তোমার আঁচল

একটি নদীর কাছে চেয়েছিলাম দুঽফোটা জল
নদীটি আমায় ভিজিয়ে দিলো,
জড়িয়ে রবো বলে যখন চেয়েছি তোমার আঁচল
পৃথিবী মেঘে ঢেকে গেলো।

৬৫.মনের সীমানা ছেড়ে

কতো দূরত্বে যাবে তুমি
কোথায় আমি ছাড়া তুমি?
দেখতে পারো
পালাতে পারো
মনের সীমানা ছেড়ে বলো
পালাবে কোথায়?

৬৬.বৃথাই কেন আকাশ দেখি?

পাখি আমার খোলো আঁখি,
বৃথাই কেন আকাশ দেখি?
দুটি আকাশ দুটি নদী
তুমি আমি মুখোমুখি।

৬৭.সুখের ঠিকানায়ঽ

তুমি হেঁটে যাও, হাঁটতে থাকো সুখের ঠিকানায়
বিপত্তিটুকু উড়িয়ে দিতে, পাশেই পাবে আমায়।

৬৮.বুকের উত্তাপ

বুকের খুব কাছে থেকেও
বোঝনি বুকের উত্তাপ,
স্বস্তির বাগানে ঘুণপোকা
তবু আমি করেছি মাফ।

৬৯.বাতাস ওড়াল চুল

বাতা

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।